পদার্থের উপাদান (পাঠ ১-২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান পদার্থের গঠন | - | NCTB BOOK
105
105

আমাদের চার পাশে সবসময়ই কোনো না কোনো পদার্থ দেখতে পাই। যেমন বই-খাতা, চেয়ার, টেবিল, পানি, বাতাস, ইত্যাদি। এগুলোর কোনো কোনোটি আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহারও করি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই আমরা হাত-মুখ ধোয়ার কাজে পানি ব্যবহার করি। এই পানি একটি পদার্থ। একইভাবে চক, চিনি, লবণ, লোহা, তামা, ইত্যাদি সবই পদার্থ। এসব পদার্থের উপাদান কী বা এরা কী দিয়ে তৈরি?

পদার্থের ভিন্নতার কারণ কী?

পদার্থের ভিন্নতার প্রধান কারণ হলো এর উপাদান (constituent)। এছাড়া পদার্থের গঠন (stucture) এর উপরও এদের ধর্ম নির্ভর করে। একেক পদার্থের উপাদান ও গঠন একেক রকম বলে তারা দেখতে ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। ধর্ম অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।

এবার আমাদের বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি পদার্থ কী দিয়ে তৈরি তা দেখা যাক। প্রথমে লোহা ও তামার কথাটি ধরি। আমরা লোহা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করি। এক টুকরা লোহা মূলত ছোটো ছোটো লোহার কণা দিয়ে তৈরি। তামার ক্ষেত্রেও তাই। এটি ছোট ছোট তামার কণা দিয়ে তৈরি। লোহাকে ভাঙ্গলে শুধু লোহারই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যায়। অর্থাৎ লোহাতে একটি মাত্র উপাদান বিদ্যমান। একইভাবে তামাকে ভাঙলে শুধু তামারই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যায় এবং এতেও একটিমাত্র উপাদান বিদ্যমান।

চিত্র-৬.১: লোহা ও তামার ক্ষুদ্র কণাসমূহ নিয়মিত সজ্জায় রয়েছে

লোহা ও তামার মতো যে সকল পদার্থ একটি মাত্র উপাদান দিয়ে তৈরি, তাদেরকে আমরা বলি মৌলিক পদার্থ।
লোহা ও তামার মতো আমাদের পরিচিত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন একটি করে উপাদান দিয়ে তৈরি এবং এরাও মৌলিক পদার্থ।

চিত্র-৬.২: হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের ক্ষুদ্র কণাসমূহ নিয়মিত সজ্জায় নাই

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দুটি অত্যাবশ্যকীয় পদার্থ হলো লবণ ও চিনি। লবণ হলো সোডিয়াম ও ক্লোরিন নামের দুই রকম উপাদান দিয়ে তৈরি একটি পদার্থ। আর চিনি হলো কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নামের তিনটি ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি।

আমরা যদি লবণকে অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইডকে ভাঙতে থাকি, তবে প্রথমে লবণের বড়ো দানা থেকে প্লেটে বা ক্ষুদ্র দানা পাবো। প্রাপ্ত ছোটো দানাগুলি আরও ক্ষুদ্র দানা এবং একপর্যায়ে একেবারে ক্ষুদ্রতম দানায় পরিণত হবে, যেটিকে খালি চোখে আর দেখা যাবে না। যদিও এটি লবণের একটি অতি ক্ষুদ্রতম অংশ, যেখানে একটি মাত্র সোডিয়াম ক্লোরাইড আছে। এই অংশ ভাঙলে তা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সোডিয়াম ও ক্লোরিন হয়ে যায়, অর্থাৎ দুটি ভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়।

একই ভাবে চিনিকে ভাঙলে শেষ পর্যন্ত কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন, এই তিনটি উপাদান বা মৌলিক পদার্থ পাওয়া যাবে।

লবণ ও চিনির মতো যে সব পদার্থ একের অধিক ভিন্নধর্মী উপাদান বা মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি তাদেরকে আমরা বলি যৌগিক পদার্থ। লোহায় মরিচা ধরার কথা আমরা কে না জানি। ধূসর কালচে রঙের লোহার তৈরি রড (যা একটি মৌলিক পদার্থ কিছুদিন বাইরে রেখে দিলে এর উপর লালচে বাদামি রঙের একটি আস্তরণ পড়ে, যার নাম মরিচা। এখানে আসলে একটি মৌলিক পদার্থ (লোহা) জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে অপর একটি মৌলিক পদার্থ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে মরিচার সৃষ্টি করে, যা আয়রন অক্সাইড নামের একটি যৌগিক পদার্থ। তাহলে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ মিলে একটি যৌগিক পদার্থ তৈরি হয়।

মিশ্র পদার্থ: একটি গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে সমান্য একটু লবণ যোগ করে নাড়া দাও। লবণ ও পানির এই মিশ্রণ, যেখানে একের অধিক পদার্থ বিদ্যমান সেটি হলো মিশ্র পদার্থ। একই ভাবে, বায়ুও এক ধরনের মিশ্র পদার্থ যেখানে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, জলীয়বাষ্পসহ অন্যান্য পদার্থ থাকে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, বায়ু এমন একটি মিশ্র পদার্থ যেখানে মৌলিক ও যৌগিক উভয় ধরনের পদার্থ রয়েছে। আবার লবণ পানির মিশ্রণে উপস্থিত লবণ ও পানি দুটিই যৌগিক পদার্থ।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion